Monday, February 23, 2015

‘বাংলা ভাষা আরও সমৃদ্ধ হবে’

সাক্ষাৎকার


ভাষাসৈনিক আবু জায়েদ শিকদার
ভাষাসৈনিক আবু জায়েদ শিকদার। ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে প্রথম যে ১০ জন মিছিল নিয়ে বের হন তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। পরিণতিতে ৩৯ দিন জেল খাটতে হয়। তখন তিনি গণিতে এমএসসি পার্ট-২-এর ছাত্র। থাকতেন ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ফজলুল হক মুসলিম হলে। পাস করে প্রায় এক যুগ বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষানিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগ দেন। গণিত ও প্রশাসনিক পরিভাষা নিয়ে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৪ বছরের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শেষে বর্তমানে তিনি অবসর যাপন করছেন। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, গতিবিধি ও বাংলা ভাষা নিয়ে তিনি আলোকিত বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফকরুল চৌধুরী

আবু জায়েদ শিকদার : কোন পরিপ্রেক্ষিত থেকে আপনি ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লেন?
ফকরুল চৌধুরী : তখন আমি ছাত্র। এর আগে ১৯৫১ সালে নাজিমুদ্দিন এলেন পল্টন ময়দানে। সেখানে তিনি পুনরায় জিন্নাহ সাহেবের কথাটি পুনরাবৃত্তি করলেন যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এর পরপরই, সম্ভবত ওই বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ফজলুল হক হলে একটি সভা অনুষ্ঠিত হলো। বলা যায়, এ সভার মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনটি ফজলুল হক মুসলিম হলে কেন্দ্রীভূত হলো। তখন ফজলুল হক হলের ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। সে উপলক্ষে পুরনো কমিটি নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব অর্পণ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই সভা। আগের কমিটির সেক্রেটারি, সম্ভবত তার নাম সালাউদ্দিন এক আবেগঘন বক্তৃতা দেন। তিনি এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দিলেন, ভাষার ওপর আবার আঘাত এসেছে, এ আঘাত প্রতিরোধের দায়িত্ব আমি নতুন কমিটির কাছে দিয়ে গেলাম। তার এ আবেগঘন বক্তৃতা আমাকে খুবই আলোড়িত করে, উদ্দীপ্ত করে। আরও অনেককেই করে। এরপর আন্দোলনের পরিসর ফজলুল হক হল ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে। সে সময় সলিমুল্লাহ হল ছিল প্রমিনেন্ট। সেখানে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতির সভা-সমিতি লেগেই থাকত। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্র চলে এলো ফজলুল হক হলে। ছাত্র সংসদের ওই সভাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাষা আন্দোলন সংগঠক গাজীউল হাসান ছিলে ফজলুল হক হলের ছাত্র।

* আন্দোলনের সাংগঠনিক কাঠামো কীভাবে গড়ে উঠল। নেতৃত্ব দিল কারা?
** আন্দোলনে যারা জড়িত ছিলেন তাদের অধিকাংশ ছিলেন ফজলুল হক হলের ছাত্র। আমিও ফজলুল হক হলের ছাত্র। বিজ্ঞানে পড়ি। গণিত আমার বিষয়। সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। ওই সভার কিছু দিন আগেই আমি বিয়ে করেছি। পল্টনে নাজিমুদ্দিনের সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। সালাউদ্দিনের বক্তৃতা শুনে আবেগাপ্লুত হলাম। মনে হলো আমাদের কিছু করতে হবে। এরপর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। শুনলাম আওয়ামী লীগ অফিসে মিটিং হচ্ছে, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হচ্ছে। তখন এসেম্বলি ছিল জগন্নাথ হলে। সে সময় এসেম্বলি বসার কথা। ওটাই তখন পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ। সেখানে এমপিরা আসবেন। সিদ্ধান্ত হলো আমাদের যে দাবি, বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তাদের জানানো হবে।

* রাষ্ট্রভাষার দাবি প্রধানত কাদের কাছ থেকে এসেছিল?
** রাষ্ট্রভাষা করার দাবিটি এসেছিল ছাত্রদের কাছ থেকে। আর ছাত্ররা রাজনীতিবিদদের জানিয়ে দেবে তারা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেতে চায়। আর তখন রাজনীতিবিদদের বেশিরভাগই ছিলেন উর্দুর পক্ষে। উর্দুর পক্ষে হলেও কেউ কেউ জোরাল প্রতিবাদ করেছিলেন। জিন্নাহ যখন রমনা রেসকোর্সে বলেন, উর্দু অ্যান্ড সেল বি অনলি স্টেট লেঙ্গুয়েজ অব দ্য কান্ট্রিÑ তখনও আপত্তি হয়েছিল। এরপরও আপত্তি হয়েছে কার্জন হলে। আপত্তি হয়েছিল; কিন্তু প্রত্যক্ষ সংগ্রাম তখনও হয়নি। প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু হয় নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার পর, সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের দায়িত্ব সমর্পণ অনুষ্ঠানের পরই। বিশেষ করে, সে সময়ের বিদায়ী হল সেক্রেটারির আবেগঘন বক্তৃতাÑ ভাষার ওপর আঘাত এসেছে, তা প্রতিরোধের দায়িত্বভার তোমাদের ওপর দিয়ে গেলামÑ এরপর থেকেই। এতে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, তাতে করে আন্দোলন ঘনীভূত হয়।
আওয়ামী লীগ এ আন্দোলনের পক্ষে। তখন আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি শামসুল হক। শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে। একুশে ফেব্রুয়ারির সভায় অংশ নিতে আমরা সকালেই পৌঁছি। শামসুল হকের সঙ্গে তখন আমার ভালো সম্পর্ক। তিনি আমাকে ফজলুল হক হলে থাকার জন্য সিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। শামসুল হক চক মোগলটুলীতে থাকতেন। আমি সেখানে যেতাম। আরেকটি কথা হলো, শামসুল হক হলেন হাফিয়ার হাজব্যান্ড। হাফিয়া ইংরেজিতে এমএ করেন। তিনি ছোটবেলায় আমাকে ইংরেজি পড়াতেন। কিন্তু এ শামসুল হক যখন সেদিন এলেন, তার কর্মকা- দেখে আমি রুষ্ট হয়ে বললাম, আপনাদের যদি এত ভয় থাকে তবে নেতৃত্ব দিতে আসবেন না।
তিনি বলতে এসেছিলেন গতকাল আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা ১৪৪ ধারা ভাঙব না। তখন কিন্তু ১৪৪ ধারা বলবৎ হয়ে গেছে। আমরা তখন কয়েকজন মিলে তাকে চেপে ধরলাম, বললাম, আপনারা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমার মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তীব্র। আমার স্পষ্ট মনে আছে, বললাম, যদি ভয় থাকে তবে কেন নেতৃত্ব দিতে আসেন। আমরা আমতলা থেকে তাকে টেনে নিয়ে যাই। এর মধ্যে মিটিং শুরু হয়ে যায়। গাজীউল হক সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় আবদুল মতিনের বক্তৃতার একটি কথা আমার মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, এ রকম অবস্থায় গান্ধী কি করতেন? গান্ধী বলতেন, ১৪৪ ধারা মানব না। আমরাও ১৪৪ ধারা মানব না। আমরা মিছিল করে এসেম্বলির সামনে যাব। বাংলাকে আমরা রাষ্ট্রভাষা করব। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে, উর্দু অনলি স্টেট লেঙ্গুয়েজÑ এ ভাবনা বাতিল করতে হবে। মিটিং কিন্তু বেশিক্ষণ হয়নি। কে কে বক্তৃতা করেছেন সবার কথা মনে নেই। তবে মতিনের গান্ধীর অহিংস আন্দোলন, আইন অমান্যের আন্দোলনের কথা মনে আছে।
১০ জন ১০ জন করে মিছিল নিয়ে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চারজনের বেশি একত্রে বের হলেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ হয়। প্রথম ১০ জনে আমি ছিলাম। আমার সঙ্গে ছিল বন্ধু ইকবাল আনসারী।

* প্রথম ১০ জনের দলে আর কে কে ছিলেন?
** বিচারপতি হাবিবুর রহমান ছিলেন। সৈয়দ আতিকুল্লাহ ছিল। আমরা যখন জেলে যাই তখন আমরা ছোট্ট একটি রুমে পাঁচজন ছিলাম। আমি, ইকবাল আনসারী, ফজলুর রহমান, সৈয়দ আতিকুল্লাহ আর খাজা নামে একজন। আমি ৩৯ দিন জেলে ছিলাম।

* তখন বাইরে কি হচ্ছে তা বুঝতে পারতেন?
** বাইরে থেকে খবর পেতাম। আমার এক বন্ধু ছিল, ফিজিক্সে পড়ত, রফিকুল ইসলাম, সে আমাকে হল থেকে খাবার দিত। ফজলুল হক হলের যে কয়জন আমরা জেলে ছিলাম, আমাদের খাবার হলের ডাইনিং থেকে আসত। একদিন প্রোভোস্ট খাবার পাঠিয়েছিলেন। ওই খাবারের মধ্যে একটি চিঠি পেলাম। সে চিঠিতে লেখা ছিলÑ তোমরা ভয় পেয়ো না, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে দুই-একদিনের মধ্যে সরকারের পতন ঘটবে।
তখনকার দিনে ঢাকার আদি বাসিন্দা মানে ঢাকাইয়্যারা ছাত্রদের ভালো সমাদর করত না। কিন্তু এ আন্দোলনের পর তাদের মনোভাব বদলে গেল।

* আটক হওয়ার পরবর্তী সময়ে কী ঘটেছিল?
** আমরা ১০ জন যখন প্রথম মিছিল করে বেরুলাম, কেউ একজন আমাদের নাম লিখে রেখেছিল। এভাবে প্রত্যেক দলের অংশগ্রহণকারীদের নাম লিখে রাখা হয়। বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই পুলিশ আমাদের আটক করে একটি পিকআপে উঠাল। ওদিকে ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে আমাদের পিকআপের দুজন পুলিশ পড়ে যায়, তারা আহত হয়। তখন পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছোড়া শুরু করে। আমাদের গাড়িটা এখন যেখানে শহীদ মিনার সেখান হয়ে দ্রুত বকশীবাজারের দিকে ছুটে যায়। আমাদের লালবাগ থানায় উপস্থিত করা হলো। সেদিন এর পরের ঘটনা আর জানা সম্ভব হয়নি। সন্ধ্যায় আমাদের জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে আরও অনেককে আনা হয়, ঢাকার বাইরে থেকে যেমন নারায়ণগঞ্জ থেকেও আনা হয়। প্রায় ২০০ কিংবা ২৫০ ছাত্রকে আটক করা হয়। আমাদের যে ওয়ার্ডে রাখা হয় সেটার নাম মেন্টাল হল।
এর মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটেছে। একুশের পর ২২ ও ২৩ তারিখে হরতাল হয়। পরের দিন বিশাল মিছিল হয়, তা সদরঘাট পর্যন্ত যায়। সে খবর আমরা পেতাম।

* আপনারা কি তখন বুঝতে পেরেছিলের একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে আপনার জড়িয়ে পড়েছেন?
** তখন ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে আমাদের ভাবনা ছিল না। আমরা তখন ভাষার অধিকার চেয়েছিলাম, বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেতে চেয়েছিলাম। এজন্য আমরা মিছিল করতে চেয়েছিলাম। দাবি আদায়ের জন্য এসেম্বলিতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের বাধা দিল এবং এ ধারাবাহিকতায় আমরা পেলাম স্বাধীনতা, স্বাধীন বাংলাদেশ।
ভাষা আন্দোলন এক অর্থে অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ যে আবুল কাশেম, যিনি বাংলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং তমুদ্দুন মজলিস, সৈনিক পত্রিকায় বিভিন্ন লেখালেখির মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ করে। আবুল কাশেমই প্রথম বাংলায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ শুরু করেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। শাহেদ আলী ছিলেন তমুদ্দুন মজলিসের সঙ্গে। এরা বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সমর্থন জুগিয়েছে এবং এর জন্য সংগ্রাম করেছে।

* আমাদের ভাষা আন্দোলনের যে ইতিহাস চর্চা, সেখানে প্রকৃত ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে কি?
** প্রথমে কিছু ধূম্রজাল ছিল বিশেষ করে কে সভাপতিত্ব করে কিংবা প্রস্তাব করে এসব নিয়ে। গাজীউল হকের নামটি আসছিল না। একদিন গাজীউল হককে আমি বললাম, এই যে ইতিহাস নিয়ে উল্টাপাল্টা হচ্ছে, আপনি তো জীবিত আছেন কিছু বলছেন না কেন? এরপর কিছু ধূম্রজালের অবসান হয়েছে।

* ভাষা সংগ্রামের পাশাপাশি ভাষা উৎকর্ষতাও জরুরিÑ সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা কী?
** আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। বাংলা আমরা বুঝি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। তখন পাকিস্তানে ভাষা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যায় আমরা এগিয়ে ছিলাম। সেক্ষেত্রে আমাদের রাষ্ট্রভাষা দাবিটি ছিল ন্যায্য। অন্যদিকে উর্দু কিন্তু পাকিস্তানের কোনো প্রদেশের ভাষা নয়। এটি একটি কৃত্রিম ভাষা। উর্দি মানে ইউনিফর্ম থেকে উর্দু শব্দ এসেছে। জিন্নাহ এটাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষাকে এড়িয়ে। এ ব্যাপারটি শুরু হয় বেসিক প্রিন্সিপাল কমিটির মূলনীতির আলোকে, সে নীতি যখন প্রকাশিত হয় তখন দেখা যায় যে, বাংলা ও পূর্ব পাকিস্তানে বিষয়াদি নেগলেট করা হয়েছে। সে সময় থেকেই মূলত শুরু হয় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব। পরবর্তী সময়ে মনে হয়, জিন্নাহ যখন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের সেন্টিমেন্ট উপলব্ধি করতে পারেন, এরপর আর ভাষা নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

* বাংলা ভাষায় আপনি তো কিছু অবদান রেখেছেন?
** আমার বিষয় হলো গণিত। বিভিন্ন কলেজে মাস্টারি করেছি। আমরা ইংরেজিতেই পড়াশোনা করেছি। উত্তরও দিয়েছি ইংরেজিতে। কিন্তু চিন্তা-ভাবনা আমাদের বাংলাতেই করতে হয়েছে। আমি পড়াবার সময় কিন্তু বাংলাতেই পড়িয়েছি। ইংরেজিতে পড়াইনি। বাংলা ভাষায় কিছু কন্ট্রিবিউট করা ইচ্ছে আমার হয়েছিল। আমি দেখলাম আমাদের পরিভাষার সঙ্কট ছিল। বিভিন্ন টার্মের সঠিক বাংলা নেই। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে একটি পরিভাষা কমিটি করি। পরিভাষা কমিটির একটি অঙ্গ হলো গণিত কমিটি। আমি যখন টিচিং করে এডমিনে এলাম, তখন আমি চেষ্টাটি করি। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকি, এডমিনে তখন নোট ইংরেজিতে লেখা হতো। তখন আমি উপলব্ধি করি নোটগুলো বাংলায় লিখলে যতটুকু বোধগম্য হয়, ইংরেজিতে তেমন হয় না। আমি বাংলায় নোট লেখা শুরু করলাম। তখন মনে হলো এ প্রশাসনিক টার্মগুলোর পরিভাষা করা জরুরি। প্রস্তাবটি আমি ভাইস চ্যান্সেলরকে দিলাম। একটি প্রশাসনিক পরিভাষা কমিটি হলো। কমিটিতে ছিলেন ড. এনামুল হক, আহমেদ শরীফ, নীলিমা ইব্রাহিম ও সর্দার ফজলুল করিম। আমাকে এ কমিটির সেক্রেটারি করা হলো। আমরা তখন কী কী শব্দের পরিভাষা করতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করলাম। কিন্তু কিছু পরিভাষা নিয়ে ভাইস চ্যান্সেলর ও এনামুল হকের দ্বন্দ্বের পরিণতিতে প্রশাসনিক পরিভাষা উদ্যোগটি বাতিল হয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে বাংলা একাডেমি এ ধরনের এই কোষ করে।

* ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম তো বটেই, আরবি মিডিয়ামেও কিছু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটা কি ভাষা সঙ্কট তৈরি করতে পারে?
** এখন প্রত্যেক বিষয়েই বাংলা ভাষায় বইপত্র বের হচ্ছে। পরিভাষাও হচ্ছে। আর যেগুলোর পরিভাষা বাংলায় সম্ভব হয় না, সেগুলো অনায়াসে বাংলায় চালিয়ে দেয়া যায়। আমরা আগে থেকেই বাংলায় ইংরেজি, ফারসি, পর্তুগিজ ও ফরাসি ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে আসছি। কম্পিউটার এসেছে, এগুলোর টার্মগুলো তো আমরা সরাসরি ব্যবহার করছি। তাই বলছি ভাষাকে রেস্ট্রিক্ট করা যাবে না। হসপিটাল কীভাবে হাসপাতাল হয়ে গেল সেটা তো আমি বুঝি না। কিন্তু অর্থ বুঝতে তো অসুবিধা হচ্ছে না। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম প্রচুর বিদেশি শব্দ ব্যবহার করেছেন। এতে ভাষার সঙ্কট তৈরি হয়নি, বরং সমৃদ্ধ হয়েছে। আমি আগামীতে বাংলা ভাষার আরও সম্ভাবনা দেখি। এ ভাষা ক্রমে আরও সমৃদ্ধ হবে।

ফকরুল চৌধুরী : আপনাকে ধন্যবাদ।
আবু জায়েদ শিকদার : শুভকামনা।

No comments:

Post a Comment