Friday, April 3, 2015

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও জনসংস্কৃতির লড়াই

 মোহাম্মদ আজম

ব্যক্তিগত চর্চায় এবং সাহিত্যসাধনায় ইলিয়াস তাঁর ভাঁড়ারে এমন সব উপকরণের সংযোগ ঘটাতে পেরেছিলেন, যেগুলো আমাদের জন্য লাভজনক হয়েছে। জনসংস্কৃতি মঞ্চ যে শিরোনাম ঠিক করেছে Ñ ‘সংস্কৃতির লড়াই ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস’ Ñ তা আমার কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও সংস্কৃতির লড়াই’ও হতে পারত। এবং সেক্ষেত্রেও সম্ভবত তাৎপর্য একই থাকত। আজকাল তাৎপর্যহীনভাবে ব্যক্তি-বন্দনার যে রেওয়াজ আমাদের চারপাশে দেখতে পাই, সেরকম অর্থহীন কোনো বাগাড়ম্বর হয়ে উঠত না। কারণ ইলিয়াস খুব নির্দিষ্টভাবে সংস্কৃতির লড়াইয়ে শামিল ছিলেন। আমরা যারা নিজেদের বর্তমান বাস্তবতা ও বর্তমান লড়াই-সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে আমাদের বিগত কৃতী ব্যক্তিদের পড়তে চাই এবং ব্যবহার করতে চাই, তাদের কাছে সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সামনে চলে আসেন। হয়ত শিরোনামটি হতে পারত ‘জনসংস্কৃতির লড়াই ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস’। বলা যেত জনসংস্কৃতির পক্ষের লড়াই। সংস্কৃতি যদিও গভীরতর অর্থে জনসংস্কৃতিই, তবুও বিদ্যমান বাগাড়ম্বতায় Ñ মধ্যবিত্তের জনবিচ্ছিন্ন সংস্কৃতির প্রবল প্রতাপের বাস্তবতায় Ñ ‘সংস্কৃতি’ শব্দটার বদলে ‘জনসংস্কৃতি’ই ব্যবহার করা দরকার। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য, অর্থাৎ ‘সংস্কৃতি’ শব্দটাকে জনমানুষের অধিকারে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি বহুমাত্রিক লড়াই। বলা দরকার, এ ধরনের লড়াইয়ে ব্যক্তি ও সাহিত্যিক ইলিয়াস একজন যোগ্য সহযাত্রী।

আপনি যখন অ্যামেরিকায়

চিমানদা নগোজি আদিচি

আপনার ধারণা ছিল অ্যামেরিকাতে সবারই গাড়ি আর বন্দুক থাকে। আপনার কাজিন ও আত্মীয়-স্বজনদেরও তাই ধারণা। অ্যামেরিকার ডিভি লটারি জেতার পরই তারা আপনাকে বলেছিল, ওইখানে একমাসের মধ্যেই তোমার গাড়ি হইবো, তারপর বিরাট বাড়ি কিন্তু ওই আমেরিকানগো মতো আবার বন্দুক কিনতে যাইও না ।

তারা লাওসের বস্তিঘরে আপনার চারপাশে জড়ো হয়ে নোনাধরা পেরেক লাগানো দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িঁয়ে ছিল, কারণ চেয়ারে বসে ইচ্ছেমতো নড়াচড়া করা যায় না, চেচিয়ে বিদায় জানানো যায় না এবং বড় কথা হলো, ফিসফিসিয়ে তাদের  জন্য অ্যামেরিকা থেকে কী কী পাঠাতে হবে তা বলা যায় না। বড়সড় গাড়ি আর বিরাট বাড়ির (এবং  বন্দুকের) কাছে তাদের চাওয়াটা কিছুই নাÑ হাতব্যাগ, জুতার মতো সামান্য জিনিস মাত্র। আপনি বলেছিলেন, ঠিক আছে, কোনো ব্যাপার না ।

Wednesday, March 18, 2015

‘একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রয়োজন’

সাক্ষাৎকার : ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর
  
প্রশ্ন : দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর : প্রত্যেক সৎ অভিপ্রায়বিশিষ্ট নাগরিকমাত্রই চায় দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অসুস্থতার অবসান হোক। আমাদের দেশের বাইরের শুভাকাক্সক্ষীরাও তা চায়। সবাই চায় বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ লাভ করুক। কিন্তু জটিল অস্থিতিশীলতা আমাদের অর্জনের পথে এমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, এর থেকে উত্তরণের টেকসই সমাধান দুরূহ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও শাসনপ্রক্রিয়ার অভিনব কপট রীতিনীতি প্রতিপক্ষকে অস্বীকার করে চলছে এবং গুরুতর সঙ্কটকে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা বলে কানাগলিতে নিয়ে নিঃশঙ্ক দেখাতে সচেষ্ট। শুধু তাই নয়, গভীরে প্রোথিত সঙ্কটকে পুরুষতান্ত্রিকতার ছদ্মবেশে দুই ‘যুদ্ধংদেহী বেগম’ এর মধ্যকার কাজিয়া হিসেবে বিবেচনা করে খারিজ করে দেয়ারও এক ধরনের প্রয়াস লক্ষণীয়। দেখা যায়, কেউ কেউ বেপরোয়া এ পরিস্থিতির মধ্যে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রের’ নজির খুঁজছেন; আবার কেউ নিজ দলীয় অবস্থানের কূপে আশ্রয় নিয়ে শুধু নির্বাচনের মধ্যে এ সঙ্কটকে সীমাবদ্ধ করে রাখেন। মূলত স্বার্থীয় অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে সমর্থকরা মনগড়া অভিমত দিয়ে চলছেন। অন্যদিকে মূল সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে আসলে আমাদের জাতীয় বৈরিতা ও বিভক্তির প্রকাশ ঘটছে।

Friday, February 27, 2015

নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চা ও ইতিহাস চর্চার গতিমুখ

আজিজুল রাসেল

১৯৮২ সালে প্রথম যখন নিম্নবর্গের ইতিহাস সংকলন বের হয়, তখন সারস্বত সমাজে আলোচনা-সমালোচনার ঢেউ বয়ে যায়। আলোচনা যত হয়েছিল, সমালোচনা হয়েছিল এর কয়েকগুন বেশি। পণ্ডিতমহলে নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার পদ্ধতি নিয়েও কম কথা ওঠেনি। সমালোচনা এসেছিল জ্ঞান চর্চার সব মার্গ থেকেই। ইতিহাস চর্চার সাম্রাজ্যবাদী ঘরানা যেমন এর কড়া সমালোচনা করেছিল, জাতীয়তাবাদী ঘরানাও সেই একই কাজ করে। এমনকি কট্টর মাকসবাদীরাও নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চাকে ভালো চোখে নেয়নি। তবে একটি কথা কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, নিম্নবর্গের ইতিহাস ইতিহাস তত্ত্বে ও চর্চায় একটি বড় পরিবর্তন এনেছে। প্রথাগত ইতিহাস চর্চার ধারায় একটি বড় ধাক্কা দেয় নিš§বর্গের ইতিহাস চর্চাগোষ্ঠী; পূর্ববর্তী ইতিহাস চর্চার সব ঘরানার আবির্ভাব পাশ্চাত্য থেকে। পাশ্চাত্যের তথ্যেই বিশ্বজুড়ে নির্মিত হত ইতিহাস। নিম্নবর্গের ইতিহাস সেক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের ইতিহাস তত্ত্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।

Monday, February 23, 2015

‘বাংলা ভাষা আরও সমৃদ্ধ হবে’

সাক্ষাৎকার


ভাষাসৈনিক আবু জায়েদ শিকদার
ভাষাসৈনিক আবু জায়েদ শিকদার। ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে প্রথম যে ১০ জন মিছিল নিয়ে বের হন তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। পরিণতিতে ৩৯ দিন জেল খাটতে হয়। তখন তিনি গণিতে এমএসসি পার্ট-২-এর ছাত্র। থাকতেন ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ফজলুল হক মুসলিম হলে। পাস করে প্রায় এক যুগ বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষানিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগ দেন। গণিত ও প্রশাসনিক পরিভাষা নিয়ে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৪ বছরের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শেষে বর্তমানে তিনি অবসর যাপন করছেন। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, গতিবিধি ও বাংলা ভাষা নিয়ে তিনি আলোকিত বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফকরুল চৌধুরী

Thursday, February 19, 2015

উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজে প্রাচ্যতত্ত্বের নবায়ন প্রসঙ্গ

প্রাচ্যতত্ত্ব ও উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজ
লেখক : ফকরুল চৌধুরী
ফেরদৌস মাহমুদ 

ফকরুল চৌধুরী মূলত কথাসাহিত্যিক হলেও উত্তর-ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু কাজ ও লেখালেখি করেছেন। সিভিল সোসাইটি নিয়ে তার একটি সমৃদ্ধ সম্পাদনা গ্রন্থ রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার প্রবন্ধগ্রন্থ ‘প্রাচ্যতত্ত্ব ও উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজ’। এই বইয়ে মোট ১২ টি প্রবন্ধ রয়েছে। দিনের পর দিন ফকরুল চৌধুরী নানা বিষয়ের পাশাপাশি প্রাচ্যতত্ত্ব ও ঔপনিবেশবাদ নিয়ে যে অধ্যয়ন, অনুশীলন ও গবেষণা করেছেন, বলা যায় প্রবন্ধগুলি তারই চুম্বক অংশ। এক্ষেত্রে পাঠজাত চিন্তার পাশাপাশি নিজস্ব চিন্তার মিলন ঘটিয়ে ফকরুল চৌধুরী প্রবন্ধগুলি রচনা করেছেন। কিন্তু বইটির নাম ‘প্রাচ্যতত্ত্ব  ও উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজ’ কেন?